সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে করণীয় । সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে তোলার আবেদন। সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে জিডি করার নিয়ম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে। এস এস সি সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে।
প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জীবনে সার্টিফিকেট, মার্কশীট, প্রবেশপত্র খুবই প্রয়োজনীয় জিনিস। যেটি ছাড়া একজন শিক্ষার্থীর কোন মূল্য নেই। একজন শির্ক্ষাথীর জীবনের বড় অর্জন তার একাডেমিক প্রবেশপত্র, সার্টিফিকেট, মার্কশীট বা নম্বরপত্র।
তবে, খুব যত্ন করে রাখার পরেও অনেক সময় আমাদের মনের অজান্তে বা অসাবধানতা কিংবা দুর্ঘটনা বশত হারিয়ে যায় এসএসসি সার্টিফিকেট বা মার্কশীট, এইচএসসি সার্টিফিকেট বা মার্কশীট, অনার্স কিংবা মাস্টার্স এর সার্টিফিকেট বা মার্কশীট। যেহেতু এগুলো আমাদের জীবনে খুবই প্রয়োজনীয়, তারপরেও যদি এগুলো হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কি এগুলোর কারণে আমাদের জীবন নষ্ট বা থেমে যাবে? না থামবেনা। এগুলো আবার ফেরত পাওয়া যাবে। তো আজকের এ পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানবো কীভাবে হারানো সার্টিফিকেট, মার্কশীট বা নম্বরপত্র ফেরত পাবো।
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ জানান, সার্টিফিকেট, নম্বরপত্র বা প্রবেশপত্র হারিয়ে গেলে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
প্রবেশপত্র, সার্টিফিকেট কিংবা মার্কশীট হারিয়ে গেলে পাওয়ার জন্য কী কী প্রদক্ষেপ নিতে হবে তা ধাপে ধাপে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
প্রথম ধাপঃ আপনার প্রবেশপত্র সার্টিফিকেট, মার্কশীট বা নম্বরপত্র ইত্যাদি হারিয়ে গেলে দেরী না করে প্রথেমে আপনার নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করতে হবে। সেখানে গিয়ে এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করতে হবে। সাধারণ ডায়েরীতে (জিডি) অবশ্যই আপনার হারানো প্রবেশপত্র, সার্টিফিকেট, মার্কশীট এর রোল নাম্বার, রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার,পাশের সন, হারানোর তারিখ এবং হারানোর স্থান উল্লেখ্য করতে হবে। সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করার পর আপনাকে এর কপি অবশ্যই আপনার নিজের কাছে রাখতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপঃ দ্বিতীয় ধাপে আপনাকে এ বিষয়ে একটি দৈনিক পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। হারানো বিজ্ঞপ্তিতে আপনার নাম, রোল নম্বর, পাসের সন, পরীক্ষার কেন্দ্র, বোর্ডের নাম ইত্যাদিসহ আপনি কীভাবে সার্র্টিফিকেট হারিয়েছেন তা সংক্ষেপে উল্লেখ্য করতে হবে।
বি.দ্র.: আপনার প্রবেশপত্র, সার্টিফিকেট কিংবা মার্কশীট যদি আংশিক বা পুরোপুরি নষ্ট হয় তাহলে থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) কিংবা দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু প্রবেশপত্র, সার্টিফিকেট কিংবা মার্কশীট হারিয়ে গেলে থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) বা দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
তৃতীয় ধাপঃ থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) ও পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আপনাকে যেতে হবে আপনি যে শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা দিয়েছেন। সেখানে গিয়ে ওই শিক্ষা বোর্ডের ‘তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্র’ থেকে একটি আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হবে। তারপর আবেদন পত্রটি নির্ভূলভাবে পূরণ করতে হবে।
চতুর্থ ধাপঃ এরপর নির্ধারিত ফি বোর্ডের সচিব বরাবর সোনালী ব্যাংকের ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। টাকা জমা দেওয়া আগ পর্যন্ত এ আবেদন কার্যকর হবেনা।
কত টাকা লাগবে?
প্রবেশপত্র, সার্টিফিকেট কিংবা মার্কশীট (জরুরি ফিসহ) ১৩০ টাকা। তবে, ত্রি-নকলের জন্য ১৫০ টাকা এবং চৌ-নকলের জন্য ২৫০ টাকা বোর্ডের সচিব বরাবর সোনালী ব্যাংকের ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
পঞ্চম ধাপঃ ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া হলে মূল ব্যাংক ড্রাফট, থানায় সাধারণ ডায়েরীর (জিডি) কপি, দৈনিক পত্রিকায় দেওয়া হারানো বিজ্ঞপ্তির কপি আবেদনের ফরমের সাথে আপনার শিক্ষা বোর্ডে জমা দিতে হবে।
আংশিক নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রবেশপত্র, সার্টিফিকেট কিংবা মার্কশীটের ক্ষেত্রে করণীয়
আপনার প্রবেশপত্র, সার্টিফিকেট কিংবা মার্কশীট যদি আংশিক নষ্ট হয়ে যায়। যদি এর অংশ বিশেষ থাকে তাহলে থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) ও পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে আপনাকে শুধু আবেদন ফর্মের সাথে ঠিক থাকা অংশ বিশেষ জমা দিতে হবে। তবে প্রবেশপত্র, সার্টিফিকেট কিংবা মার্কশীটের ঠিক থাকা অংশ বিশেষে আপনার নাম, পরীক্ষার রোল নম্বর, পরীক্ষার কেন্দ্র, পাসের সন, শিক্ষা বোর্ড ,জন্মতারিখ না থাকলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
এবার চলুন আবেদন ফরম ও কি কি পূরণ করতে হবে একবার দেখে নেওয়া যাক:
ফর্মটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন:
আবেদনপত্রে যা পূরণ করতে হবে:
আবেদনপত্রের শুরুতেই উল্লেখ্য করতে হবে আপনি কোন পরীক্ষার কী হারিয়েছেন, কীভাবে হারিয়েছেন এবং কী কারণে আবেদন করছেন। তারপর আপনাকে শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে।
ধাপ ০২: দ্বিতীয় ধাপের প্রথম শূন্যস্থানে আপনাকে আপনার বাবার নাম ইংরেজী বড় অক্ষরে ও পরের শূন্যস্থানে বাংলায় স্পষ্টাক্ষরে লিখতে হবে।
ধাপ ০৩: তৃতীয় ধাপে আপনাকে আপনার মায়ের নাম ইংরেজী বড় অক্ষরে লিখতে হবে।
ধাপ ০৪: চুতর্থ ধাপের প্রথম শূন্যস্থানে আপনি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধীনে পরীক্ষা দিয়েছেন সেই শিক্ষা প্রতিষ্টানের নাম ইংরেজী বড় অক্ষরে লিখতে হবে। পরের শূন্য স্থানে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলায় লিখতে হবে। একইসাথে পরের শূন্যস্থানগুলিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডাকঘর, থানা, জেলা লিখতে হবে।
ধাপ ০৫: এই ধাপের শূন্যস্থানগুলিতে আপনি যে পরীক্ষার কাগজ হারিয়েছেন সেই পরীক্ষা সম্পর্কিত তথ্য পূরণ করতে হবে।
ধাপ ০৬: এই ধাপের শূন্যস্থানে আপনার পঠিত নৈর্বাচনিক বিষয়সমূহ পূরণ করতে হবে।
ধাপ ০৭: এই ধাপের শূন্যস্থানে আপনার জাতীয়তা উল্লেখ্য করতে হবে।
ধাপ ০৮: এই ধাপে আপনাকে আপনি যে দৈনিক পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন সে পত্রিকার নাম লিখতে হবে।
ধাপ ০৯: এই ধাপে আপনাকে আপনি আপনার হারানো কাগজ পেতে যে টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দিয়েছেন সেই সোনালী ব্যাংকের সেবা নং লিখতে হবে।
ধাপ ১০: সর্বশেষ ধাপে আপনার পুরো ঠিকানা লিখতে হবে।
আরো কিছু নিয়মাবলী:
- আবেদনপত্রে অবশ্যই আপনি যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছেন সেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের নাম ও দস্তখতসহ সিলমোহর থাকতে হবে।
- তবে, প্রাইভেট প্রার্থীদের আবেদনপত্রে অবশ্যই গেজেটেড কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও নামসহ সিলমোহর থাকতে হবে।
- বিদেশি নাগরিককে ব্যাংক ড্রাফটসহ নিজ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
- যারা ইংরেজি ভার্সনে কাগজ নিতে ইচ্ছুক তাদের অবশ্যই ইংরেজিতে ফর্ম পূরণ করতে হবে।
এছাড়া আরো কিছু নিয়মাবলী আছে যা নিচে ছবি আকারে দেওয়া হলো। নিয়মাবলী ভাল করে পড়ে তারপর ফরমটি সঠিক ভাবে পূরণ করে জমা দিতে হবে।